Shunno
শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৩
Shunno: Khunno Badhon
Shunno: Khunno Badhon: সবাই চাই তার নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে । কিন্তু আমার তা আর হোল না । আমার পছন্দে বিয়ে করলে বাবা আমাকে বাড়িতে উঠতে দেবেন...
Khunno Badhon
সবাই চাই তার নিজের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে । কিন্তু আমার তা আর হোল না । আমার পছন্দে বিয়ে করলে বাবা আমাকে বাড়িতে উঠতে দেবেন না, এটা তিনি আমাকে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন । বাবার মতের বিরুদ্ধে কিছু করা আমার দ্বারা হবে না । বাবার, আমাকে এই কথাটি বলার পেছনে কিছু কারন আছে । আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম । বাবাকেও বলেছিলাম আমি ঐ মেয়েকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না । উনি আমার কথাই রাজি হয়েছিলেন । কিন্তু হঠাৎ করে একদিন মেয়েটি আমাকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করলো । তখন আমার সেকি বেহাল অবস্থা । খাওয়া নেই দাওয়া নেই সারাদিন মেয়েটার কথা ভাবতাম । দাড়ি কামানোও ছেড়ে দিলাম । তিন চার সপ্তাহের মধ্যে দাড়ি, গোঁফ স্বাধীন ভাবে বেড়ে চললো । দেবদাস হবার চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু কোন কাজ হয়নি । আমার চেষ্টা বৃথা গেছে । দেবদাস হতে পারলাম না । আমি ছিলাম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । আমার অবস্থা দেখে বাবা মায়ের মনেও খুব কষ্ট লেগেছিল । বাবা আমাকে হথাৎ একদিন জোর করে নাপিতের কাছে নিয়ে গেলো । আমার দাড়ি শেভ করানো হোল । তারপর প্রাই অনুষ্ঠান করেই আমাকে পেত পুরে ভাত খাওয়ানো হোল । মেয়েটাকে ভুলতে চেষ্টা করলাম । কিন্তু এখনোও হইত পুর পুরি পারিনি । বড় বেশি ভালবেসেছিলাম তাই ভুলতে পারি নাই । ঐ তার পর থেকে বাবা বলে দিয়েছেন আমার পছন্দ করা মেয়ে এ বাড়িতে বউ হতে পারবে না । আমি নাকি ভালো মেয়ে পছন্দ করতে পারি না । কি করবো বাধ্য হয়ে বাবার কথা মেনে নিতে হচ্ছে ।
প্রাই দুই বছর পরের কথা, বাবা আমাকে বিয়ে দেবার জন্য মেয়ে থিক করলেন । কিন্তু আমাকে দেখতে দিলেন না । পাছে আমি আবার মেয়েটাকে যদি আমার পূর্বের ইতিহাস বলে দেই এই ভয়ে । আমার বাবার উপর প্রচণ্ড রাগ হোল । আরে ব্যাটা তুই বিয়ে করার সময় কি আমার মাকে দেখিস নাই । তো আমার দেখতে অসুবিধা কোথাই । আমিতো মানছিই এই মেয়েকেই বিয়ে করবো । আমার ভাগ্যে মেয়ে দেখে বিয়ে করা হচ্ছে না এটা জেনে চুপ করে থাকলাম । আমার বিয়ে হয়ে গেলো । বিয়ে করার পর বাসর ঘরে আমি আমার নতুন বউয়ের পাশে চুপ করে বসে আছি । কিন্তু আমার বউ আমার মত চুপ করে থাকল না, আমাকে বললো –
আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি তাইনা ? আমি জানি আপনি আপনার মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করেছেন ।
আমি একটু লজ্জাটে ভাবে বললাম – তুমি কিভাবে জানলে ?
আপনার বাবা বিয়ের আগে আমাকে সবকিছু বলেছে ।
তার পরেও তুমি আমাকে বিয়ে করলে কেন ?
কেন করবো না, আপনার তো কোন দোষ দেখিনা । তারপর বলুন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা ?
আমি মনে মনে বললাম, এ আবার কি নির্লজ্জ মেয়ে গো বাবা, নিজেকে কেমন লাগছে তা আবার বাসর রাতে স্বামীকে জিজ্ঞেস করে । আমি একটু চুপ থেকে বললাম –
আমি এখন পর্যন্ত তমার মুখ দেখিনি ।
আমার কথা শুনে আমার নতুন বউ মাথার ঘোমটা ফেলে দিয়ে আমার দিকে তাকাল । আমি শুধু এক পলক তার মুখের পানে তাকালাম । তাকিয়েই আমার মন ভরে গেলো । মনে মনে বাবাকে এক হাজার সালাম দিয়ে ফেললাম । যাক বলা যায় বাবার পছন্দ আছে । আসলে ঠিকই বলেছে বাবা, আমি পছন্দ করলে হইত এতো সুন্দর বউ পেতাম না ।
এবার বলুন আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে কিনা ।
আমাকে তুমি আপনি বলছ কেন ? তুমি বলবে । তমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে ।
তোমাকেও আমার খুব পছন্দ হয়েছে ।
তোমার নামটা কিন্তু আমি এখনো জানতে পারলাম না ।
আমার নাম রূপা ।
তোমার নাম হিরা হলে ভালো হতো, রূপা একটু কম দামি হয়ে যাচ্ছে ।
নাম রূপা হলেও ও আমার কাছে হিরার চেয়েও দামী । ও আমাকে আমার পুরনো সৃতি গুলো সব ভুলিয়ে দিতে লাগলো । আমাকে একটা নতুন জীবন দিলো । সব কিছু খুব সুন্দর ভাবেই চলছিলো । হঠাৎ একদিন খবর পেলাম আমি জনক হতে চলেছি । রূপা আমাকে বলে যে তার ছেলে সন্তান হবে । কিন্তু আমি বলি মেয়ে হবে । এই নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে হালকা পাতলা ঝগড়া লেগেই থাকে । তখন ও আমার উপর প্রচণ্ড রেগে যায়, বলে,-“যদি মেয়ে হয় তাহলে মেয়েকে তোমার কাছে রেখে আমি চলে যাব । মেয়েদের আমার আকদম পছন্দ হয় না ।” একদিন দেখি রূপা একটা নাদুস নুদুস ছেলের ছবি ঘরে টাঙিয়ে রেখেছে । জিজ্ঞেস করতেই বলল,-
আমার ছেলে হবে তাই ছেলের ছবি টাঙিয়ে রেখেছি ।
অবশেষে আমি একদিন অফিস থেকে ফিরে শুনলাম, আমার বউ একটা মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে । কিন্তু ডাক্তার যে date দিয়েছিলো তার এক মাস আগেই হয়ে গেলো । আমি রূপার কাছে যেতেই ও আমাকে বলল –
মেয়ে হয়েছে, তুমি খুব খুশি হয়েছ তাইনা ?
কিন্তু তুমি তো খুশি না ।
কে বলেছে আমি খুশি না । তোমার খুশিই তো আমার খুশি । দেখ ও তোমার দিকে কেমন পিট পিট করে তাকাচ্ছে, আমার দিকে তাকাচ্ছেই না ।
অনেক মতামত যাচাই করে আমার মেয়ের নাম রাখলাম নিভা । আমার বাবার দেওয়া নাম । কেন নিভা রাখলেন আমি কখনো জিজ্ঞেস করি নি । মেয়েটাও হয়েছে ফুট ফুটে । ওর মায়ের চেয়েও প্রাই দ্বিগুণ সুন্দর হবে বলে আমি ভেবে রেখেছি । মাঝে মাঝে রূপাকে রাগাবার জন্য নিভাকে বলি চুনি । ও রেগে গেলে বলি এবার মেয়ে হলে নাম রাখবো পান্না । তাহলে আমার ঘরে সব থাকবে, রূপা, চুনি, পান্না, যদি আরো হয় তবে মনি মুক্তা ইত্যাদি । আমার মেয়েকে আমি চুনি বলে ডাক দিলে ও দু হাত তুলে খেলা করে আর হাসে । কিন্তু আমি ওকে এখন তেমন কোলে নিই না । ছোট বাচ্চাদের আমি কোলে নিতে পারি না । একটু বড় হলে নিবো ।
মেয়েটার জন্ম হয়েছে একটু আগে আবার কথাও ফুটলো একটু আগে । মাত্র এক বছর বয়সেই ও ভালোভাবে হেটে বেড়াতে পারে, আধো আধো কথাও বলে । আমি যতক্ষণ বাড়িতে থাকি ততক্ষণ আমার কাছে ছাড়া কারো কাছে থাকে না । আমার কাছেই ওর সব দাবি পুরন হয় তাই ও আমার কাছেই বেশি থাকে । আমি ওর কোন কথাই ফেলতে পারিনা । আমি রাত্রে যখন বাড়ি আসি তখন ও ঘুমিয়ে থাকে । কিন্তু আমি একটা কথা বলা মাত্রই ওর ঘুম ভেঙ্গে যায় । আমি বুঝিনা ও ঘুমের মধ্যেও আমার কথা কিভাবে বুঝতে পারে । এখনো ওর কথা পুরপুরি ফোটে নাই । কিন্তু আধো আধো মুখেই ও আমাকে যে কত প্রশ্ন করে তার ইয়ত্তা নেই । যখন ও একটু বড় হল তখন বাহিরে ছেলেদের সাথে খেলা করতে যেতো। আর বাড়িতে এসে আমাকে প্রশ্ন করা আরম্ভ করতো । একদিন আমাকে এসে জিজ্ঞেস করছে –
বাবা তোমাল বিয়ে হয়েতে ?
আমি ওর কথা শুনে ভড়কে গেলাম । হঠাৎ ওর মাথাই এ প্রশ্ন এলো কথা থেকে । আমি আর কি উত্তর দেব….। আমি বললাম –
এটা জেনে তুমি কি করবে মামনি ?
বলনা বাবা । ঐদে থেদিন বলো কাকা দিজ্ঞেত কলল, আমি বুলতে পালিনি । বলনা বাবা হয়েতে কিনা ।
হ্যাঁ মামনি হয়েছে ।
কাল থাতে হয়েতে ?
আমি একটু অবাকই হলাম । হঠাৎ এসব কি বলে । তার পরেও উত্তর দিলাম ।
তোমার মায়ের সাথে হয়েছে ।
তুমি মিত্যা কতা বলতো, মায়ের থাতে বিয়ে হলে আমি দেকতামনা ?
বিয়ে জিনিসটা যে কি তা এখনো ও বোঝে নি । তাই আমি বললাম –
তুমি তখন ঘুমাচ্ছিলে মা ।
তাওলে এদিন বিয়ে ওলে আমাকে দেকাবে ।
আচ্ছা মা দেখাবো ।
ঐ দিন তো কোন রকমে প্রসঙ্গটা বাদ দিয়েছিলাম । কিন্তু আবার কিছু দিন পর হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো –
বাবা তমাল থাতে মায়ের কি কোন ক্র্যাশ আতে ?
প্রশ্ন শুনেই আমি চমকে উঠলাম । ক্র্যাশ জিনিসটা যে কি আমি আজও বুঝিনা । তাই না বুঝেই বলেছিলাম –
হ্যাঁ আছে মামনি ।
আমার মেয়েটাও আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলো । ওর চপলতাও বাড়তে লাগলো । একবার কোথা থেকে একটা ছোট কুকুরের বাচ্চা নিয়ে এসেছে । ওর মা তা দেখে ওকে একটা চড় দিয়ে কুকুরের বাচ্চাটাকে বাহিরে ফেলে দিয়ে এসেছে । তাই ফোঁপাতে ফোঁপাতে সজা আমার কাছে চলে এসেছে । এসেই আমার কোলের মধ্যে বসে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো । কিছু একটা হয়েছে বুঝলাম । কোন কিছু হলে বা ভয় করলে বা কেউ মারলে ও শুধু ফুঁপিয়ে কাঁদে কাউকে কিছু বলে না । আমি ওকে যতো জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে, ও ততো আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে । কিছুক্ষণ কেঁদে আমার হাত ধরে ওর মায়ের কাছে নিয়ে গেলো । ওর মায়ের মুখে সব শুনে, ওকে শুনিয়ে ওর মাকে একটু বকা দিলাম । তার পর ওর কান্না থেমে গেলো । যখন খেতে গেলাম তখন নিভা ওর মায়ের কোলে গিয়ে বসলো ভাত খাবার জন্য । আর তখন যেই ওর মা বলেছে, “এখন আবার আমার কোলে আসছিস কেন, যা তর বাবার কাছেই যা । তর বাবাকে দিয়ে আমাকে বকা খাওয়ালি, আবার আমার কাছে আসছিস কেন ।” আবার শুরু হল কান্না । কান্না থামাতে মায়ের আদর শুরু হয়ে গেলো । কিন্তু আদরে আর কাজ হল না । আবার বাইনা ধরেছে কুকুরের বাচ্চা এনে দিতে হবে তা না হলে কিছু খাবে না । বাধ্য হয়ে আমি রাজি হয়ে গেলাম, তার পরে কিছু খেলো । তার পর ওর মায়ের কাছে আর গেলই না । যতক্ষণ না আমি কুকুরের বাচ্চা এনে দিচ্ছি ততোক্ষণ আমার পিছু ছাড়ছে না । অনেক খজা খুজি করে একটা কুকুরের বাচ্চা এনে দিলাম । দুই দিনে ওটাকে ওর বশে এনে ফেললো । এখন ও যেখানেই যায় কুকুরটা ওর পিছু পিছুই যায় । ঘুমানর সময় পাশে বসে থাকে । কুকুরটা আমাকেও খুব সম্মান করে । আমাকে দেখলেই লেজ নাড়া শুরু করে । হইত সালাম দেবার চেষ্টা করে ।
এক শীতের সময়, নিভা আমাকে বলল –
বাবা একটা ভালো সোয়েটার কিনে দাও ।
আমি বললাম –তোমার তো অনেক সোয়েটার আছে মা, আবার কি করবে ?
দেখছনা কতো শীত পড়ছে, আমার কুকুরটার কি শীত লাগেনা ?
কি আর করা মেয়ের আদেশ, একটা সোয়েটার কিনে দিলাম । ও খুব যত্ন করে ওটা কুকুরটাকে পরিয়ে দিলো । এখন কুকুরটাকে একটা ভেড়ার মতো লাগছে । সোয়েটার পেয়ে কুকুরটাও খুব খুশি । বারবার আমার কাছে এসে লেজ নাড়ছে । কুকুরটা সোয়েটার পরার পর আর মাটিতে শয় না । ওর বুদ্ধি আছে বোঝা যায় ।
নিভা আমার কাছে প্রতিদিন এটা ওটা আবদার করে । তাই আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, ও কিছু আবদার না করলে আমার খারাপ লাগে । আমি খুজে বেড়াই ওর কি লাগবে । আমাকে ছাড়া ও একটি মুহূর্ত থাকতে চাই না । যখন ওর মা ওর নানীর বাড়ি যায় তখন বড় জোর দুদিন থাকতে পারে । ওর কান্নার চোটে তলপি তলপা গুটিয়ে আবার বাড়ি চলে আসতে হয় ।
একদিন রাতে আমি বাহিরে বসে বই পরছিলাম । হঠাৎ দেখি নিভা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । আমি জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, কিছু বলল না । আমি বুঝতে পারছি ওকে ওর মা মেরেছে । নিভা আমাকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে গেলো । ঘরে গিয়ে দেখি ওর মা কেমন জানি করছে । ও এটা দেখেই ভয় পেয়েছে । আমি তাড়াতাড়ি ওর মাকে গিয়ে ধরলাম । রূপা ভালো করে কথা বলতে পারছে না । আমাকে বলল –
তোমার মেয়েকে তুমিই মায়ের আদর দিও । আমি ওকে তোমার কাছেই রেখে যাচ্ছি ।
রূপার অবস্থা দেখে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম । তাড়াতাড়ি করে আমি ডাক্তার আনতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু রূপা আমাকে যেতে দিলো না । আমার হাতটা ধরে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হাতটা ছেড়ে দিলো । তখন আর রূপার দেহে ওর আত্মাটা নেই । আমাকে একা করেই রূপা চলে গেলো । আমার চারিদিক যেন অন্ধকার হয়ে গেলো । এই তিন বছরের মেয়েটাকে আমি কিভাবে মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখবো । রূপার যখন দাফন হয়ে গেলো তখন আমি ঘরে একা বসে আছি । আমার দুই চোখ দিয়ে পানি ঝরছে । নিভা এসে ওর কচি হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল –তুমিও মায়ের ঐ অবস্থা দেখে ভয় পেয়েছ ?
ও শুধু জানে ভয় পেলে আর মার খেলে শুধু মানুষ কাঁদে । নিভা আমাকে বলল –
আর কেঁদনা বাবা, দেখ আমি আর ভয় পাচ্ছি না, আমি কাঁদছি না তুমিও কেঁদনা ।
আমি শুধু চুপ করে কেঁদেই চলেছি । ও একাই কথা বলে যাচ্ছে ।
জান বাবা আগে তুমি আর মা ছাড়া আমাকে তো কেউ আদর করতে আসতো না । কিন্তু আজ সবাই আদর করছে কেন ?
আমি আর কি জবাব দেব । আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । রাত্রে যখন আমি নিভাকে খাওয়াতে গেলাম, তখন জিজ্ঞেস করলো –“আজ মা কোথাই গেছে বাবা ?”
তোমার মা একটু বেড়াতে গেছে, নাও তুমি ভাত খেয়ে নাও ।
মা বেড়াতে গেলো আমাকে নিয়ে গেলো না কেন ?
তুমি যে শুধু বাড়িতে আসার জন্য কাঁদো ।
তাই বলে কি আমাকে বলেও যাবে না ।
তুমি যেতে চাইতে যদি তাই বলেনি মা মনি ।
মাকে ছাড়া তাহলে আমিও খাবনা । আমি মায়ের উপর রাগ করেছি । মাকে বল মা যেন এসে আমার রাগ ভাঙ্গিয়ে আমাকে খাইয়ে দেয় ।
এখনকার মতো খাও সোনা । কালকে মায়ের সাথে খেও ।
যাও আজকের মতো খেলাম কিন্তু কাল মা না এলে কিন্তু খাবনা, এটা মাকে বলে দিও ।
আজকে কোন রকমে ভুলিয়ে ভালিয়ে খাওয়ালাম । কিন্তু আমার বড় চিন্তা হচ্ছে কালকে আবার কি ভাবে খাওয়াবো । ও ছোট হলে কি হবে, সব কিছু মনে রাখে । আমার পক্ষে হইত ওর মায়ের অভাব পুরন করা সম্ভব নয় । কিভাবে আমি ওকে বুঝাব,আমার যে সে ভাষা টুকুও নেই । এই বাচ্চা মেয়েটা কি তা মেনে নেবে ? সে জানে তার মা আছে । মৃত্যু কাকে বলে তা এখনো সে জানেনা ।
দুই তিন দিন আমার মেয়েটাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রেখেছি । কিন্তু আজ আর সে আমার কোন কথা শুঞ্ছে না, মাকে তার চাইই । আমি বললাম –
মামনি দেখছনা তোমার মা তোমাকে ছেড়ে কিভাবে পালিয়ে আছে, তাহলে তুমিও তোমার মাকে ছাড়া খাবে না কেন ?
বাবা তুমিই বল আমি কি মাকে ছাড়া কখনো খেয়েছি ?
দেখছনা তোমার মা আমাকে কেমন কষ্ট দিচ্ছে, আমি কি খাচ্ছি না ? তোমার মা আমাদেরকে ভুলে গেছে তাই আসছে না । তোমাকে ছাড়া কি আমিও কখনো খেয়েছি মা, চল আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে খাবে চল ।
ঠিক আছে চল । এখন থেকে কিন্তু আমি মায়ের সাথে কথা বলবো না । আমি তোমার সাথে থাকবো । মাকে আমাদের সাথে নেবনা ঠিক আছে বাবা ?
আচ্ছা ঠিক আছে মামনি এবার চলো ।
রাত্রে আমি রূপার একখানা ছবি সামনে ধরে বসে ছিলাম । পুরনো কথা গুলো মনে পড়তেই আমি আর চোখের পানি সামলাতে পারলাম না । হঠাৎ কচি দুটা হাত আমার দু চোখের জল মুছে দিলো । নিভা আমাকে ওর পরিধেও জামা দিয়ে চোখ মুছে দিচ্ছে, আর বলছে-
বাবা তুমি কেদনা, মায়ের সাথে আমার আড়ি । মা তোমাকে কাঁদাচ্ছে । এবার মা আসলে আচ্ছা করে বকা দিবে ঠিক আছে বাবা ।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না । নিভা আমার হাত থেকে ওর মার ছবিটা নিয়ে অন্য ঘরে চলে গেলো । আমি কিছুক্ষন চুপ চাপ বসে থাকলাম । কিছুক্ষণ পর নিভাকে ঘুম পাড়ানর জন্য গেলাম । গিয়ে দেখি আমার কাছ থেকে ছবিটা নিয়ে এসে একা একা কাঁদছে আর বলছে- মা তুমি জাননা আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা । তাহলে তুমি আসছনা কেন ? আমি তোমাকে জ্বালাতন করি তাই তুমি আমাকে রেখে চলে গেছো ? তোমাকে না দেখলে আমার খুব কষ্ট হয় তুমি জাননা মা ?
এই টুকু মেয়ের বুকের ভেতর যে কি জ্বালা টা আমি বুঝতে পারছি । বাবাকে শান্তনা দিয়ে এসে নিজে কাঁদছে ।
সারাদিন বসে বসে মেয়েটা আমার কি যেন ভাবে, হইত মায়ের কথা ভাবে । কুকুরটাকে সামনে নিয়ে এক মনে ভাবে । কুকুরটাও হইত ওর মনের বাথা বুঝতে পারে । সারাদিন ওটাও গম্ভির হয়ে থাকে । নিভা চুপ করে বসে থাকে আর কুকুরটা ওর হাঁটুর উপর মাথা দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে । একদিন যেখানে আলোর জোয়ার নেমে এসেছিলো আজ সেখানে ভাটা পড়ে গেছে । অন্ধকার বাসা বেঁধেছে ।
এভাবে অনেক দিন কেটে গেছে । এখন নিভা আর তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে না । আমার কাছে আর কোন বাইনা ধরে না । আর আমাকে জ্বালাতন করে না । কেনই বা করবে, এখন তো সে তার মায়ের কোল পেয়েছে ।
..................... ক্ষুণ্ণ বাধন ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)